ভালো থাকার জন্য কোন কোন অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে?
আমরা সকলে আমাদের জীবনে ভালো থাকতে চাই। ভালো থাকা মানে শুধু হাসিখুশি থাকা না বরং মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা। আমরা সকল দিক থেকে যে ভালো থাকবো এটা একদিনে করা সম্ভব না এটার জন্য আমাদের প্রতিদিনের ছোট ছোট কিছু অভ্যাস তৈরি করতে হবে।
আজ আমরা জানবো সেই সকল অভ্যাসগুলো যা আপনাদের জীবনকে পুরোপুরি বদলে দেবে এবং প্রতিদিন আপনাকে এক ধাপ এক ধাপ করে আয় এগিয়ে নিয়ে যাবে সফলতার দিকে।
মানসিকভাবে ভালো থাকার জন্য আমাদেরকে যে সব ধরনের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
মানসিক স্বাস্থ্য হল জীবনের আসল ভিত্তি । আমাদের মন যদি না ভালো থাকে, তাহলে আমাদের কোন কাজ করতে ভালো লাগবে না। নিচের অভ্যাসগুলো যেগুলো দেওয়া আছে এগুলো আপনি মেনে চললে মানসিক প্রশান্তি আসবে আপনার।
প্রতিদিন নিজের জন্য আপনি কিছু একা সময় কাটান।
এখনকার ব্যস্ত জীবনে আমরা এখনকার ব্যস্ত জীবনে আমরা নিজের সঙ্গে একান্ত সময় কাটাতে ভুলে গেছি। প্রতিদিন রাত্রেবেলা অন্তত ১৫ থেকে ২০ মিনিট মতো একা বসে নিজে চিন্তা নিজের অনুভূতি নিজের ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নিয়ে ভাবতে হবে এটা আপনার মনে চিন্তা ভাবনা কমাবে এবং নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসে বাড়াবে।সকল কিসের জন্য কৃতজ্ঞ থাকা-- ছোট ছোট জিনিসের মধ্যে সুখ খোঁজা
ভালো থাকার জন্য সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। প্রতিদিন আপনি তিনটি জিনিস লিখে রাখেন যেগুলোর জন্য আপনি কৃতজ্ঞ। এটা আপনার মনোভাবের ওপর ইতিবাচক প্রভাব রাখবে আর জীবনে ছোট ছোট আনন্দগুলো ভালোভাবে উপভোগ করতে শেখাবে।
জীবনের নেতিবাচক চিন্তা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।
নিজের মনের মধ্যে সব সময় ইতিবাচক ভাবনা ভাবার চেষ্টা করেন। ব্যর্থতা ও হতাশার মুহূর্তে আসিবে, কিন্তু সেগুলো আপনাকে যেন নিচে না নামাতে পারে। নিজেকে বোঝেন, সবকিছুই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলাবে।
শারীরিকভাবে যে ভালো থাকার জন্য যেসব অভ্যাস করতে হবে।
আপনার শরীর যদি ভালো না থাকে, তাহলে আপনার মনে ভালো থাকবে না। তাই নিজের শরীরের যত্ন নেওয়া ভালো থাকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
নিয়মিত প্রতিদিন ব্যায়াম করেন, অন্তত ৩০ মিনিট ।
ব্যায়াম শুধু আপনার শরীর সুস্থ এবং ফিট রাখে না, এটি আপনার মস্তিষ্কে অ্যান্ড অরফিন নামে হরমোন রিলিজ করে । এ হরমোনটির কাজ হল, আপনাকে ভালো অনুভব করানো। সকালে দৌড়ান, যোগ ব্যায়াম করেন বা হালকা স্ট্রেচিং করেন যা যা আপনার ভালো লাগে তা করেন। ব্যায়াম আপনাকে সতেজ এবং প্রাণবন্ত রাখবে।
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাবেন সাত থেকে আট ঘন্টা।
আমাদের মধ্যে অনেকেই ঘুমকে গুরুত্ব দেয় না তুচ্ছ মনে করে, কিন্তু এটি আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাসগুলোর মধ্যে এটি একটি। ঘুম আমাদের মস্তিষ্কে এবং শরীরকে পুনর্জীবিত করে। সময়মতো ঘুমান আর সময়মতো ওঠার অভ্যাস গড়ে তোলেন।
স্বাস্থ্যকর খাবার খান এবং জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলেন।
যেমন খাবার খাবেন আপনার মন তেমনি হবে। ভাজা পোড়া অতিরিক্ত চিনি বা অতিরিক্ত তেল এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। ফল সবজি প্রোটিন এবং প্রচুর পরিমাণে পানি পান করেন। এক সপ্তাহ নিয়ম মেনে খাবার খেলে নিজের শরীরের মধ্যে পার্থক্য টের পাবেন।
ইতিবাচক জীবন যাপনের অভ্যাস গড়ে তোলা।
ইতিবাচক জীবন মানে হলো নিজেকে প্রতিদিন এক ধাপ ভাল মানুষ করার চেষ্টা করা। এতেনিচের অভ্যাসগুলো আপনাকে সাহায্য করবে।
সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস গড়ে তোলেন।
ভোরবেলা দিনে সবচেয়ে শান্ত সময় । সকালে ঘুম থেকে উঠলে এটা আপনাকে, শান্ত মনোযোগী এবং ক্রিয়েটিভ করে তুলবে। সকালবেলার সূর্যের আলো শরীরের জন্য দারুন উপকারী।
প্রতিদিনের নিজের কাজের পরিকল্পনা আগে থেকে করে রাখবেন।
যে মানুষ পরিকল্পনা ছাড়া চলে সে কখনো সফল হতে পারে না, সে দিনশেষে অনেক ক্লান্ত আর অসম্পূর্ণ বোধ করে। প্রতিদিন ভোর সকালে ভোর বেলায় বা আগের রাতে কি কি কাজ করতে হবে সেটা সম্পূর্ণ একটি লিস্ট তৈরি করো। এটা করলে আপনি নিজের সময় সঠিক জায়গায় ব্যয় করতে পারবেন এবং মানসিক চাপ কমবে।
মোবাইল বা সোশ্যাল মিডিয়াতে সময় সীমিত ব্যয় করে।
আপনার অতিরিক্ত স্কিন টাইম আপনার মনোযোগ নষ্ট করা এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় এমনকি মানসিক ক্লান্তি বাড়ায়। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিক করেন যখন যখন শুধু মোবাইল বা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করবেন তা বাদে আর কখনো করবেন না।
সম্পর্ক ভালো আর রাখার জন্য অভ্যাস।
মানুষ সামাজিক প্রাণী। ভালো সম্পর্ক ছাড়া মানুষ সুখী থাকা সম্ভবই না। নিচের অভ্যাসগুলো আপনার সম্পর্ক গুলোকে দৃঢ় করবে।
পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান।
পরিবার আপনার মানসিক আশ্রয়। প্রতিদিন কিছু সময় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গল্প করেন হাসেন খাবার খান ইনডোর গেম খেলেন বা আউটডোর গেম খেলেন। এটা আপনার সম্পর্ক আরো গভীর হবে এবং মানসিক শান্তি এই বাড়বে আপনার জীবনে।
বন্ধুদের সঙ্গে খোলামেলা ভাবে আলোচনা করেন।
সত্যিকারের বন্ধুত্ব আপনার মনের চাপ হালকা করে। মন খারাপ থাকলে কারো সঙ্গে সে ব্যাপারটা শেয়ার করেন। মনে রাখবেন .''শেয়ার করলে মনের বোঝা কমে।''
সবাইকে ক্ষমা করতে শিখেন।
রাগ অভিমান ঘৃণা এসব শুধু আপনার মনকে কষ্টই দিবে। ক্ষমা করে দিলে আপনার মনকে মুক্ত রাখবে এবং শান্তি এনে দেবে।
নিজেকে উন্নত করার জন্য যেসব অভ্যাস করবেন।
ভালো থাকা মানে শুধু আজকের জন্য সুখ না বরং নিজেকে প্রতিদিন একটু একটু করে অন্য তও করতে হবে।
প্রতিদিন কিছু নতুন শিখার চেষ্টা করেন।
একটি নতুন স্কিল, বা নতুন একটি বই , বা নতুন কোন বিষয়ে ডকুমেন্টারি ভিডিও দেখা। শেখার অভ্যাস আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করবে এবং জীবনের মান উন্নত করবে।
ভালো বই পড়েন এবং নোট তৈরি করেন।
বই মানুষের সেরা বন্ধু।, নিজের উন্নয়নের জন্য মোটিভেশনাল আত্মউন্নয়ন, নিজের উন্নয়নের বা মনোবিজ্ঞানের বই পড়া। যা ভালো লাগে সেগুলোর মধ্যে থেকে কিছু নোট করে রাখবেন জীবনের কঠিন সময় গুলোতে সেই কথাগুলো আপনাকে দিকনির্দেশনা দেবে।
নিজের জীবনের লক্ষ্য গুলো লিখে রাখেন ও প্রতিদিন সেগুলো সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং চিন্তাভাবনা করেন।
যে মানুষগুলো লক্ষ্যহীন, সে খুব সহজেই বিভ্রান্ত হয়ে যাবে। আপনার জীবনের লক্ষ্যগুলো কাগজে লিখে রাখবেন এবং প্রতিদিন খেয়াল করে দেখবেন। আপনি কত টাকা আছে যেতে পেরেছেন।
মনকে শান্ত রাখার জন্য ভালো অভ্যাস।
মন শান্ত থাকলে সবকিছুই সহজ মনে হয়।। নিজের যেসব অভ্যাসগুলো দেওয়া আছে সেগুলো আপনার মনকে শান্ত স্থির রাখবে।
প্রতিদিন মেডিটেশনের অভ্যাস করবেন।
প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট নিঃশব্দে বসে শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে মনোযোগ দিন। এটি মনের অস্থিরতা কমায় এবং এটি মানসিক ভারসাম্য আনে।
প্রতিদিন প্রকৃতির মাঝে সময় কাটান।
প্রকৃতিতে থাকা গাছ,ফুল ,নদী, আকাশ প্রকৃতির কাছাকাছি থাকলে মানসিক চাপ কমে। প্রতিদিন কিছু সময় বাইরে হাটেন বা ছাদে বাগানে বসে থাকেন।
নিজের শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে মনোযোগ দিন।
যখন এই মন অস্থির মনে হবে, ধীরে ধীরে বড় বড় শ্বাস নিন এবং ছাড়েন। এই ছোট কৌশলটি আপনার মস্তিষ্কে শান্তি এনে দেবে এবং মনকে বর্তমান মুহূর্তে ফিরিয়ে আনবে।
মন্তব্য: ভালো থাকা কোন বিলাসিতা নয় বরং এটা আপনার নিজের প্রতি দায়িত্ব।, নিজের যত্ন নেওয়া সুস্থ থাকা সম্পর্ক ঠিক রাখা, আর প্রতিদিনে একটু করে নিজের উন্নতি করা এটাই আসল সুখের রাস্তা।
আপনি আজ থেকে ছোট ছোট অভ্যাসগুলো নিজের মধ্যে তৈরি করুন। প্রতিদিন একটু ব্যায়াম একটু বই পড়া কিছু শান্তি আর একটু শেখা।

